কক্সবাজারই হয়ত প্রথম চোখে ভাসে যখন বাংলাদেশে ভ্রমণের কথা আসে!
আর কক্সবাজারে ভ্রমণের যখন মনস্থির করেন তখন হয়ত মনের অকপটে ভেসে উঠে নীলজলরাশির সুদীর্ঘ সমুদ্র সৈকত! অথবা সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ গুটিকয়েক পর্যটনস্থান!
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটনের প্রধান কেন্দ্রভূমি হলেও এর ঐতিহ্যবাহী কলা-কৃষ্টি সংস্কৃতি ভ্রমণপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়।
পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহ্য স্থাপনা, দ্বীপ, নদী, উপকূলীয় প্রকৃতি ইত্যাদি দেখার মতো আরও অনেক সুন্দর সুন্দর স্থান রয়েছে ভ্রমণের জন্য।
এই সব স্থানসমূহ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভ্রমণকারীদের – যা তাদের ভ্রমণকে আরও দীর্ঘায়িত করে তুলছে।
কক্সবাজারের পূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে – বেশীরভাগ ভ্রমণকারীদের নিকট কক্সবাজারের অন্যান্য ভ্রমণস্থানসমূহও বাদ যায় না!
কক্সবাজারে যারা বেড়াতে আসে তাঁদের হয়ত কি কি পর্যটনস্থান আছে তা সঠিকভাবে জানা থাকেনা। তাই এখানে একনজরে কক্সবাজার সকল দর্শনীয় স্থানসমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ণনা করা হল।
অগোচরে থাকা কক্সবাজার ভ্রমণ স্থানসমূহও জানতে পারবেন! পাশাপাশি, আপনার ভ্রমণ পরিধি বাড়াতে পারবেন তা নয়কি!
০১. কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত
১২০ কি.মি দীর্ঘ! কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত-পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। যতদূর সমুদ্র সৈকত ততদূরই বালুকাময় ও কাদামুক্ত।
এই সমুদ্র সৈকতই কক্সবাজার কে বিশ্ব পরিচিতি এনে দিয়েছে। কক্সবাজার ভ্রমণ লাখো মানুষের ভ্রমণের তীর্থ স্থান। বাংলাদেশের সবচেয়ে পর্য টনবহুল এলাকা-পর্যটন রাজধানী।
আবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের যেসব জায়গায় পর্যটকদের আনাগোণা সবচেয়ে বেশি থাকে তার মধ্যে লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী সী বিচ পয়েন্ট অন্যতম।
- লাবনী বিচ– লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত। যা পুরাতন বিচ নামে পরিচিত। কক্সবাজার শহর থেকে নৈকট্যের কারণে লাবনী সমুদ্র সৈকতকে কক্সবাজারের প্রধান সমুদ্র সৈকত বলা হয়।
- সুগন্ধা বিচ– সুগন্ধা পয়েন্টে অবস্থিত। পায়ে হেঁটে এই বিচ এ যাওয়া যায়। সার্ফিং উপভোগ করতে পারবেন!
- কলাতলী বিচ– ভাস্কর্য ডলফিন মোড় অথবা সুগন্ধা সৈকত হতে হেঁটে এ বিচ উপভোগ করতে পারবেন। লাবণী ও সুগন্ধা বিচ এর চেয়ে পর্যটক তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
চিত্ত বিনোদনের সমস্ত উপকরণ এই তিনটি সমুদ্র সৈকতে আপনি উপভোগ করতে পারবেন।
ঘোড়া ও বিচ বাইকে চড়া, প্যারাসাইলিং কিংবা ঘুড়ি উড়ানো, বিচ বোট চালানো কিংবা সার্ফিং ইত্যাদি সহ আরও অনেক কিছুর অভিজ্ঞতা পেয়ে যাবেন।
চেয়ারে বসে সমুদ্র উপভোগ কিংবা হেঁটে হেঁটে সুউচ্চ পাহাড় পরিভ্রমণ করতে পারবেন। শান্ত সকাল হতে প্রাণোচ্ছল বিকেল কিংবা পূর্নিমা রাতের মতো নিজেকে রঙিন করে নেয়া যাবে। সেই সাথে সমুদ্র স্নানে নিজেকে ক্লান্তিমুক্ত করে তুলুন।
আপনার একঘেয়েমিতা দূর হবে!
অন্যদিকে, বার্মিজ পণ্য কেনা কাটার জন্য বার্মিজ মার্কেট, ঝিনুক পণ্য কেনা কাটার জন্য ঝিনুক মার্কেট, ভোজনরসিকদের জন্য সুস্বাদু স্থানীয় খাবার, বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক হোটেল-মোটেল-কটেজ – এ সবকিছুর জন্যই কক্সবাজার ভ্রমণ বা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের নিকট অনন্য!
তাই বিনোদন ও অবকাশ যাপনের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকের কাছে অতি প্রিয়।
০২. সেন্টমার্টিন দ্বীপ
সেন্টমার্টিন দ্বীপ যেন সাগরের মাঝে এক স্বর্গীয় উদ্যান! সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম দৃশ্য উপভোগের জন্য এটি অতুলনীয়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরেই এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। স্ফটিক-স্বচ্ছ জল, প্রবাল ও বিভিন্ন জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্রতার কারণে মনে হবে এক প্রাকৃতিক বিস্ময়!
প্রচুর নারিকেল গাছের সমারোহ থাকায় এই সেন্টমার্টিন দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে ডাকা হয়ে থাকে। তবে স্থানীয়দের নিকট এই দ্বীপ ‘দারুচিনি দ্বীপ’ নামেও পরিচিত।
শীত মৌসুমই সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র উপযুক্ত সময়! সেন্টমার্টিন দ্বীপরে আসল সৌন্দর্যের উপভোগ এক রাত না থাকলে বুঝতে পারবেন না! যারা একদিনের জন্য ভ্রমণে আসে তারা বিকেলের মধ্যেই ফিরে যায়, তাই বিকেলের পর থেকে দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।
আপনি হয়ত জীবনের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন ভরা পূর্ণিমায়! রাত জেগে জেগে অবলোকন করতে পারবেন স্রষ্টার কী সুনিপূন কারুকার্য মনে হবে কোন অমিয় সুখের গ্রহে আপনার বসবাস!
অন্যদিকে নান্দনিক ছোট ছোট হোটেলগুলো আপনার বিশ্রামে এনে দিবে প্রশান্তি।
আর দ্বীপজুড়ে আপনি ঘুরে ঘুরে স্বাদ নিতে পারবেন হরেক রকম সুস্বাদু খাবাবের। বলতেই হয়, কক্সবাজারের মধ্যে সবচেয়ে প্রাকৃতিক ও টাটকা রান্না করা সামুদ্রিক মাছ খেতে পারবেন এই সেন্টমার্টিন দ্বীপে!
অন্যদিকে রোমাঞ্চ ও এডভেঞ্চারপ্রিয় ভ্রমণপিপাসুরা নতুন সংযোজন স্কুবা ডাইভিং এর মাধ্যমে ভ্রমণে বৈচিত্রতা আনতে পারবেন। সমুদ্রতলের জগত দেখার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর কিছু নেই!
- ছেঁড়া দ্বীপ – বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনের স্থান ও দ্বীপের নাম হলো ছেঁড়া দ্বীপ! এটা সেন্টমার্টিন দ্বীপের অংশও বলা যায়।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছেঁড়া দ্বীপটি ৩ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট। বসতিশূন্য এই দ্বীপটি আরেক অপরুপ প্রাকৃতিক বিস্ময়!
সামুদ্রিক ঢেউ, সারিসারি নারিকেল ও কেয়া গাছ, নির্মল বাতাস, প্রবাল পাথর সমন্বয়ে ছেঁড়া দ্বীপ এক অনন্য সৌন্দযের আধার।
চাঁদনি রাতে এ দ্বীপটি সাজে তার অপরুপ সাজে। আপনি চাইলে ভরা পূর্নিমাতে নিজ উদ্যোগে ক্যাম্পিংও করতে পারবেন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি থেকে স্পীডবোটে কিংবা ট্রলারের মাধ্যমে এই দ্বীপে যেতে হয়।
এডভেঞ্চারপ্রিয় পযটকরা ভাটার সময় সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে পায়ে হেঁটে ছেড়া দ্বীপে গিয়ে থাকে।
থাকার জন্য ছেড়া দ্বীপে কোন উপায়ই নেই, জোয়ারে বেশির ভাগ জায়গা ডুবে যাওয়ার কারনে ওখানে থাকার মতো অবস্থা থাকে না। তাই আপনাকে সেন্ট মার্টিনে ফিরে আসতে হবে।
০৩. মেরিন ড্রাইভ রোড
এক পাশে বঙ্গোপসাগর অন্যপাশে ঝর্ণা ধারা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কক্সাবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড।
কক্সবাজার কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সূবিস্তত ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি।
বর্তমানে এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রোড! কক্সবাজার ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষনও বটে এই মেরিন ড্রাইভ রোড।
বিশাল বিস্তৃত সমুদ্রের নীল জলরাশি, হিমছড়ি সৈকত, ইনানি পাথুরে সৈকত, পালতোলা বোট এবং জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, আর রাস্তার দু’পাশে সারি সারি ঝাউবন, পাহাড়ের ঝর্ণা ধারা মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে যেতে যেতে আপনি এই মনোরম দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
কক্সবাজার মূল শহর থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস বা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
মেরিন ড্রাইভ রোডের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে চমৎকার সব রেস্টুরেন্ট। যা আপনার ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে পারবেন যেকোন রেস্টেুরেন্টে বসে।
সব মিলেয়ে দারুণ উপভোগ্য।
এ রোড দিয়েই ইনানি ও হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার একমাত্র উপায়।
০৪. হিমছড়ি সমুদ্র সৈকত
কক্সবাজারে আসল কিন্তু হিমছড়ি গেল না- এরকম পর্যটক খুব কমই পাওয়া যাবে।
কক্সবাজার মূল শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার মূল সমুদ্র সৈকতের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নির্জন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।
সমুদ্র সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি ঝর্ণা ও হিলটপ ভিউ এর জন্য পযটকের কাছে সমান জনপ্রিয়।
- হিমছড়ির হিল টপ– টিকেট কেটে প্রায় ২ শতাধিক সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠতে হয়। পাহাড়ের চূড়া থেকেই কক্সবাজারের পুরো সমুদ্র সৈকতটা এক পলকে দেখতে পারবেন। পাহাড়ের উপরে কিছু বিশ্রামাগারও আছে।
- হিমছড়ি ঝর্ণা– হিলটপের পাশেই একটি শীতল পানির ঝর্ণা রয়েছে। এটি ছোট হলেও বর্ষামৌসুমে তার প্রকৃত রুপ ধারণ করে। ভিতরের পরিবশটা বর্ষায় আরও উপভোগ্য ও সুন্দর দেখায়।
- হিমছড়ি উদ্যান– ১৭২৯ হেক্টর আয়তনের একটি জাতীয় উদ্যান রয়েছে। যার পরিবেশ ভ্রমণের জন্য চমৎকার।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়েই হিমছড়ি যেতে হয়।
একপাশে বিস্তৃর্ন সমুদ্রের বালুকা বেলা আর এক পাশে সবুজ পাহাড়ের সারি দেখে দেখে হিমছড়ি ভ্রমণ উপভোগ্য হয়ে উঠে।
০৫. ইনানি সমুদ্র সৈকত
দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হল ইনানী সৈকত।
কক্সবাজার শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং হিমছড়ি থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে এটির অবস্থান।
ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল আর পাথর। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই ইনানী সমুদ্র সৈকতে প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি।
শান্ত প্রকৃতির এই ইনানী সমুদ্র সৈকত উপভোগের পাশাপাশি কানারাজা গুহা এবং ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘরও পযটকদের সমান আগ্রহের বিষয়!
- কানারাজা গুহা– কক্সাবাজারের রামুর আশ্চর্য সুড়ঙ্গ। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো রহস্যঘেরা এই গুহা। ইনানী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের কূল ঘেঁষে পাটুয়ারটেকের সুউচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে কানারাজার গুহার অবস্থান।
- ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘর– কানা রাজার গুহার পাশেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ফইল্লা চাকমার মাচাং ঘর অবস্থিত।
কক্সবাজার সমুদ্রের বালুকাময় সৈকত দেখার পাশাপাশি অবশ্যই আপনার মন চাইবে একবার হলেও ইনানির পাথরের সমুদ্র সৈকত দেখে আসার জন্য।
মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে কক্সবাজার থেকে ইনানী যেতে হয়।
০৬. রামু বৌদ্ধ বিহার
বৌদ্ধ কৃষ্টির জন্য বিখ্যাত কক্সবাজারের রামু। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান।
রামুতে সর্বমোট ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি রয়েছে।
এখানে রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির, প্যাগোডা, ধাতু ও ব্রোঞ্জের তৈরি বৌদ্ধ মূর্তি, ছোট-বড় ১৩টি বৌদ্ধ মূর্তি নিয়ে লাল সিং ও পাশে সাদা সিং নামের বৌদ্ধ বিহার।
আরো আছে ১৩ ফুট উচু ব্রোঞ্জের বুদ্ধ মূর্তি যা পর্যটকদের ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। আশপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে আরও অসংখ্য ছোট-বড় বৌদ্ধবিহার।
উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় দেখতে পাবেন দেশের সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তি। যার দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট।
বৌদ্ধবিহারের মূল দরজা দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে ৮৮ ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠলেই দেখা মিলবে ‘ভুবন শান্তি ১০০ সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তি’।
কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে আসতে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে এ প্রসিদ্ধ স্থান অবস্থিত।
আর এই বৌদ্ধবিহার ও প্রত্নতাতিত্ত্বক নিদর্শন পরিদর্শনে সারা বছর দেশি-বিদেশি পর্যটকের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
পর্যটন নগরী হওয়ায় পর্যটকদের কাছে এগুলোর আকর্ষণ থাকে অনেক বেশি।
০৭. রামু রাবার বাগান
ছোট বড় পাহাড়, টিলা আর বিস্তীর্ণ সমতল ভূমি জুড়ে সারি সারি রাবার গাছ যেন সবুজের হাতছানি।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রামু রাবার বাগান অবস্থিত। রামু রাবার বাগানের মধ্যে একাধিক ফাঁকা জায়গা রয়েছে; যেখানে পযর্টকরা আড্ডায় মেতে উঠতে পারে।
এখানে বাগান র্কতৃপক্ষের একটি দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার (রেষ্ট হাউস) রয়েছে। আপনি চাইলে বনভোজনেরও আয়োজন করতে পারবেন।
অল্প বয়সীরা এখানে ফুটবল, ক্রিকেটসহ একাধিক খেলায় মেতে ওঠার সুবিধা রয়েছে।
এ বাগান ভ্রমণে এসে ভ্রমণকারীরা নতুন অনেক কিছুর সঙ্গে পরিচিতও হতে পারবে । জানতে পারবেন রাবার চাষ সম্পর্কে নানা তথ্য।
সরাসরি দেখার সুযোগ পাবেন, কীভাবে রাবার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করা হয়।
পাহাড়ের উপরে হাজার হাজার রাবার গাছের মধ্য দিয়ে হাঁটলে অন্য রকম এক অনুভূতি খুঁজে পাবেন নিশ্চয়।
০৮. টেকনাফ সমুদ্র সৈকত
টেকনাফ সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকত গুলোর একটি। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তুলনায় টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের পানি অধিক স্বচ্ছ।
কক্সবাজার মুল শহর থেকে টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফ শহর থেকে দক্ষিণে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এই সমুদ্র সৈকতের অবস্থান।
জেলেদের আনাগোনা এ সৈকতে বেশি থাকে। বিশেষ করে খুব সকাল কিংবা সন্ধ্যায় জেলেদের বেশি মাছ ধরতে দেখা যায় এ সৈকতে। এত রঙিন বাহারি জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোন সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় না।
টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের পাশেই ঘুরতে পারবেন শ্যামলাপুর সমুদ্র সৈকতও।
- শ্যামলাপুর সমুদ্র সৈকত– মাছধরার নৌকা আর জেলে ছাড়া সেই ভাবে কোনো মানুষজন চোখে পড়বে না, ঝাউবনে পাওয়া যাবে সবুজ ছোঁয়া। কেউ কেউ একে বাহারছড়া সমুদ্র সৈকত নামেও ডেকে থাকে।
যারা নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করতে চান তাদের জন্য টেকনাফ সমুদ্র সৈকত আদর্শ জায়গা।
টেকনাফ প্রধান সড়ক অথবা মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যায়।
০৯. শাহপরীর দ্বীপ
নীল সমুদ্রের অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এক বিস্তীর্ণ দ্বীপ শাহপরীর দ্বীপ। একসময় এটি দ্বীপ থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছুকাল আগে এটি মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
টেকনাফ মুল শহর থেকে শাহপরীর দ্বীপ এর দূরত্ব প্রায় পনের কিলোমিটার।
শাহপরীর দ্বীপের তিনটি সৈকতে গিয়ে দেখতে পাবেন সমুদ্রের রূপ।
এ সৈকতগুলোতে কোনো রকম লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা নেই। তাই জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোন চিহ্নও থাকে না।
যদি আপনি সমুদ্রে গোসল করতে চান তবে সৈকতে নামার আগে থেকেই নিজ দায়িত্বে জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন।
জোয়ারের সময় রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো আধাআধি ডুবে যায় নোনাপানিতে। এই দৃশ্য যতক্ষন দেখবেন ততক্ষন ভালো লাগবে।
টেকনাফে যাওয়ার পথে দেখে যেতে পারবেন আদিবাসী পাড়া, রোহিঙ্গা বস্তি, পাহাড়ী গুহা আর মাথিনের কুপ, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, বাংলাদেশ-মায়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাট, টেকনাফ নেচার গেম রিজার্ভ, শিলখালী চিরহরিৎ গর্জনগাছ বাগান, মারিশবনিয়া সৈকত, কুদুমগুহা। চাইলে ট্রলারে চড়ে বা বোট ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও।
১০. মাথিন কূপ
টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্র নাফ নদীর পাশে টেকনাফ পুলিশ ফাঁড়ির চত্বরে এই মাথিনের কূপ।
এই কূপের পেছনে রয়েছে এক বেদনাবিধুর প্রেম কাহিনী। রাখাইন জমিদারকন্যা মাথিন আর এক পুলিশ কর্মকর্তার এক মর্মান্তিক প্রেম কাহিনীর সাক্ষী এ মাথিন কূপ।
এতে শাশ্বত অকৃত্রিম প্রেমের এক ইতিহাস বিরচিত হয়।
গোত্র আভিজাত্যের প্রতিবন্ধকতায় ধীরাজ-মাথিনের বিয়ে হয়নি। সমধুর প্রেমের করুণ বিচ্ছেদে মাথিন তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করেন।
পর্যটকগণ টেকনাফ ভ্রমণে গেলে মাথিনের কূপ দর্শন করতে কখনই ভুল করেন না।
যেখানে পাবেন চিরচেনা টেকনাফের এক ভিন্ন বূপ, ভিন্ন সংস্কৃতি, মানুষের আবেগ আর তার জটিলতা আর সবার উপরে এক মগ কন্যার প্রেম উপাখ্যান যা রূপকথা কেও হার মানায়।
১১. মহেশখালী দ্বীপ
মহেশখালী বাংলাদেশের বাংলাদেশে একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। মহেশখালী দ্বীপটি কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে।
দ্বীপটি লবণ ও পান ব্যবসায়ের প্রধান কেন্দ্র।
পান চাষ এখানকার মানুষের ঐতিহ্যবাহী পেশা ও ব্যবসা।
এই দ্বীপটিতে আরও দেখতে পাবেন সামুদ্রিক মাছ ধরা, শুটকি সংগ্রহ, চিংড়ি চাষ করা এবং তা প্রক্রিয়াজতকরণ সহ নানান শিল্প।
শুষ্ক মৌসুমে সামুদ্রিক শুঁটকির জন্য দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীদের ভিড় জমতে দেখা যায় এই দ্বীপে।
মহেশখালী দ্বীপের দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে – আদিনাথ মন্দির, বড় রাখাইন পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, আদিনাথ ও গোরকঘাটা জেটি, লবণ মাঠ, শুটকি মহাল, গোরকঘাটা জমিদারবাড়ী, উপজেলা পরিষদ দীঘি, সোনাদিয়া দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকত, হাঁসের চর, চরপাড়া সী-বিচ, মৈনাক পাহাড়, প্যারাবন, চিংড়ী ঘের ইত্যাদি।
১২. সোনাদিয়া দ্বীপ
৯ বর্গ কি.মি আয়তন নিয়ে ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত এই সুন্দর দ্বীপটি। স্থানীয় ভাষায়ে এটিকে সোনাদিয়ার চর বলে।
কক্সবাজারের মূল শহর থেকে প্রায় ১৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিনে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত।
একটি খাল দ্বারা এটি মহেশখালি দ্বীপ থেকে বিছিন্ন হয়েছে।
এ দ্বীপকে যাযাবর পাখিদের জন্য ভূ-স্বর্গ বলা যায়। দ্বীপের পশ্চিম দিকে বালুকাময় সমুদ্র সৈকত রয়েছে যেখানে ঝিনুক ও মুক্তা পাওয়া যায়।
শুষ্ক মৌসুমে এখানে প্রচুর মাছ শুকানো হয় যা দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়। জীব বৈচিত্রের অপূর সমাহার এই সোনাদিয়া দ্বীপে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বিদ্যমান রয়েছে।
সাগরের গাঢ় নীল জল, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন, সামুদ্রিক পাখি সবমিলিয়ে এক ধরনের রোমাঞ্চিত পরিবেশ দেখতে পাবেন এই দ্বীপে।
এখানে আপনি চাইলে পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধব নিয়ে ক্যাম্পও করতে পারবেন।
১৩. আদিনাথ মন্দির
বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালীতে হিন্দুদের তীর্থস্থান আদিনাথ মন্দিনের অবস্থান।
পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এ মন্দির সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি পবিত্র স্থান। ।
এটি মূলত মহাদেব-এর মন্দির।
আদিনাথ মন্দির সমুদ্রস্তর থেকে ৮৫.৩ মিটার উচুঁ মৈনাক পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। দ্বীপের ভূমি থেকে এই মন্দিরে উঠার জন্য আপনাকে ৬৯টি সিঁড়ি পাড়ি দিতে হবে।
বর্তমানে এই মন্দির প্রাঙ্গনে একটি মসজিদ ও একটি রাখাইন বৌদ্ধ বিহার রয়েছে।
সে কারণে মন্দিরটিকে অনেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক মনে করেন।
প্রতিবছর শিব চতুর্দশী উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এ মন্দিরে।
এ উপলক্ষে ১০/১৫ দিন মেলা বসে। আর মেলা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি অনেক পযটকের ভিড় দেখতে পারবেন।
নৌকা, লঞ্চ বা স্পিডবোটে অল্প সময়েই এখানে পৌঁছানো যায়। মহেশখালী গেলেই আদিনাথ মন্দিরে যেতে পারবেন।
১৪. কুতুবদিয়া দ্বীপ
প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কুতুবদিয়া দ্বীপে কোন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখানকার বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে।
এখানে প্রকৃতির নানান বৈচিত্র্য উপলব্দি করতে পারবেন।
নির্জন সমূদ্র সৈকত, বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, লবণ চাষ, বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ আছে দেখার মতো অনেক কিছু।
- বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র কুতুবদিয়ায় অবস্থিত। প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সৈকতের দক্ষিণ প্রান্তে, আলী আকবরের ডেল এলাকায়। কুতবদিয়া গেলে দেখতে ভুল করবেন না দেশের বড় এই বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে।
- কুতুবদিয়া বাতিঘর- সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরানো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে এখনও ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনও কখনও জেগে উঠতে দেখা যায়।
- কুতুব আউলিয়ার দরবার- দ্বীপের ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরীফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী। প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে (৭ ফাল্গুন) হাজারও ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। কথিত আছে কুতুবদিয়ার নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই।
চকরিয়া মগনামা ঘাট থেকে স্পীড বোট অথবা ট্রলারে করে কুতুবদিয়া যেতে পারবেন।